মঙ্গলবার ২১শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইউএসএ থেকে প্রকাশিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল
সংবাদ এবং তথ্যে আপনার প্রয়োজন মেটাতে

জগদীশ চন্দ্র বসু একজন বাঙালি পদার্থবিদ, উদ্ভিদবিদ, জীববিজ্ঞানী এবং প্রথম কল্পবিজ্ঞান রচয়িতা

  |   বৃহস্পতিবার, ০৬ এপ্রিল ২০২৩   |   প্রিন্ট   |   12 বার পঠিত

জগদীশ চন্দ্র বসু একজন বাঙালি পদার্থবিদ, উদ্ভিদবিদ, জীববিজ্ঞানী এবং প্রথম কল্পবিজ্ঞান রচয়িতা

বৈজ্ঞানিক জগদীস চন্দ্র বসু পদার্থবিজ্ঞান এবং উদ্ভিদবিদ্যায় অসামান্য অবদান রেখেছেন। তার অবদান মানব সভ্যতার অগ্রযাত্রায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। এই আবিষ্কারে তিনি নিজের নাম শুধু বাঙালির ইতিহাসে নয়, পৃথিবীর ইতিহাসেও স্বর্ণাক্ষরে লিখে গিয়েছেন।

ইনস্টিটিউট অব ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ার্স তাকে ’রেডিও’ বিজ্ঞানের জনক হিসেবে অবিহিত করে।

জগদীশ চন্দ্র বসু সাধারণ মানুষের মাঝে পরিচিত ‘গাছের প্রাণ আছে’ এই আবিষ্কারের মাধ্যমে। তার উল্লেখযোগ্য আবিষ্কারের মধ্যে রয়েছে মাইক্রোওয়েভ রিসিভার ও ট্রান্সমিটারের উন্নয়ন এবং ক্রেসকোগ্রাফ যন্ত্র যা দিয়ে গাছের বৃদ্ধি নিখুঁতভাবে পরিমাপ করা যায়। উদ্ভিদের জীবনচক্র তিনি প্রমাণ করেছিলেন।

জগদীশ চন্দ্র বসুর জন্ম ১৮৫৮ সালের ৩০শে নভেম্বর মুন্সীগঞ্জে। তাঁর পরিবারের প্রকৃত বাসস্থান ছিল বিক্রমপুরের রাঢ়িখাল

জগদীশ চন্দ্র বসু শিক্ষা জীবন শুরু করে ছিলেন ফরিদপুরের একটি স্কুল থেকে। এরপর ১৮৬৯ সালে ১১ বছর বয়সে তিনি কলকাতা চলে যান। এবং সেখানে তিনি সেন্ট জিভিয়ার্স স্কুল কলেজ থেকে ১৮৭৫ সালে তিনি এন্ট্রাস পাস করেন।

১৮৭৯ সালে তিনি বিজ্ঞানের স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর উচ্চ শিক্ষার জন্য জগদীশ চন্দ্র বসু ইংল্যান্ডে চলে যান। প্রকৃতিবিজ্ঞান বিষয়ে শিক্ষালাভের উদ্দেশ্যে  ক্যামব্রিজের ক্রাইস্ট কলেজে ভর্তি হন। সেখান থেকে তিনি ট্রাই পাস করেন।

১৮৮৪ সালে জগদীশ চন্দ্র বসু লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি.এস.সি ডিগ্রি লাভ করেন।

১৮৮৫ সালে জগদীশ চন্দ্র ভারতে ফেরার পর কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। প্রেসিডেন্সি কলেজে অধ্যাপনার প্রথম আঠারো মাসে জগদীশ যেসব গবেষণা কাজ শেষ করেছিলেন তা লন্ডনের রিয়েল সোসাইটির জার্নালে প্রকাশিত হয়। বৈদ্যুতিক তরঙ্গের ওপর তার গবেষণার কাজ তিনি শুরু করেন ১৮৯৪ সালে। এই গবেষণা পত্রগুলোর সূত্র ধরেই লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় ১৮৯৬ সালের মে মাসে তাকে ডিএসসি ডিগ্রী প্রদান করেন।

১৮৯৫ সালে জগদীশ চন্দ্র বসু অতিক্ষুদ্র তরঙ্গ সৃষ্টি এবং কোন তার ছাড়া এক স্থান থেকে অন্য স্থানে তা প্রেরণে সফলতা পান। ১৮৮৭ সালে বিজ্ঞানী হেরৎস প্রত্যক্ষভাবে বৈদ্যুতিক তরঙ্গের অস্তিত্ব প্রমাণ করেন।

এনিয়ে আরও গবেষণা করার জন্য তিনি চেষ্টা করছিলেন যদিও শেষ করার আগেই তিনি মারা যান। জগদীশ চন্দ্র তার অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করে সর্বপ্রথম প্রায় ৫ মিলিমিটার তরঙ্গ দৈর্ঘ্যবিশিষ্ট তরঙ্গ বা মাইক্রোওয়েভ। আধুনিক রাডার, টেলিভিশন এবং মহাকাশ যোগাযোগের ক্ষেত্রে এই তরঙ্গের ভূমিকা অনস্বীকার্য। মূলত এর মাধ্যমেই বর্তমান বিশ্বের অধিকাংশ তথ্যের আদান প্রদান ঘটে থাকে।

“মাইক্রোওয়েভ আবিষ্কারের ব্যাপারটা ছিল খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। আজকের দিনে মহাকাশ বিজ্ঞানে, চিকিৎসা বিজ্ঞানে, টেলিভিশন সম্প্রচারে এবং বিভিন্ন যন্ত্রপাতিতে মাইক্রোওয়েভ কাজে লাগে। কম্যুনিকেশনের (যোগাযোগ) ক্ষেত্রে আরও বিশেষ করে এই তরঙ্গ কাজে লাগে।”

“দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় যখন সাবমেরিন এলো, রাডার এলো, তখন মানুষ বুঝতে পারল এই মাইক্রোওয়েভের গুরুত্ব কতখানি। তিনি যখন এই আবিষ্কার করেছিলেন, তখন তার কোন ব্যবহারিক প্রয়োগ ছিল না। মার্কনি এবং তদানীন্তন বিজ্ঞানীরা যোগাযোগের জন্য যে বৈদ্যুতিক তরঙ্গ ব্যবহার করেছিলেন তা তারা করেছিলেন লঙ্গার ওয়েভ (দীর্ঘ তরঙ্গ) ব্যবহার করে- মাইক্রোওয়েভ ব্যবহার করে নয়।”

অর্থাৎ জগদীশ বসুর আবিষ্কার ছিল অতি ক্ষুদ্র বেতার তরঙ্গ, যার থেকে তৈরি হয়েছে আজকের মাইক্রোওয়েভ, যা পরবর্তীতে ‘সলিড স্টেট ফিজিক্স’-এর বিকাশে সাহায্য করেছিল। পরে তিনি পদার্থ বিজ্ঞানের আরও গুরুত্বপূর্ণ নানা আবিষ্কার করেন যেমন ‘ডিটেক্টর’, ‘রিসিভার’ ইত্যাদি।

আধুনিক পদার্থ বিজ্ঞানের বিষয়ে তাঁর আবিষ্কার নিয়ে ইংল্যাণ্ডে বক্তৃতা দিয়ে বিশ্ব-খ্যাত বহু বিজ্ঞানীকে চমকে দিয়েছিলেন জগদীশ চন্দ্র বসু। সেসময় লন্ডনের একটি দৈনিক পত্রিকা ডেইলি এক্সপ্রেস তাকে গ্যালিলিও-নিউটনের সমকক্ষ বিজ্ঞানীর স্বীকৃতি দিয়েছিল।

কিন্তু পদার্থ বিজ্ঞানে এমন অসাধারণ অবদান সত্ত্বেও জগদীশ চন্দ্র বসু সারা বিশ্বে খ্যাতিলাভ করেছিলেন উদ্ভিদবিজ্ঞানী হিসাবে।

তিনি সবার আগে আবিষ্কার করেছিলেন গাছপালার প্রাণ আছে। গাছকে আঘাত করলে গাছ কীভাবে সাড়া দেয়, সেটা জগদীশ বসু  তার আবিষ্কৃত’ক্রেসকোগ্রাফ’ যন্ত্রের সাহায্যে প্রমাণ করে দেখান, যা উদ্ভিদ বিজ্ঞানের খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা আবিষ্কার।

গাছ যে বাইরের আঘাত করলে তাতে সাড়া দেয় সেটা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণ করার জন্য জগদীশ বসু সূক্ষ্ম সব যন্ত্র সাধারণ কারিগর দিয়ে তৈরি করেছিলেন যেগুলি কলকাতার বসু বিজ্ঞান মন্দিরে সংরক্ষিত রয়েছে।

জগদীশ বসু ১৮৯৯ থেকে ১৯০৭ সাল পর্যন্ত জীব ও জড় বস্তুর প্রতিক্রিয়ার ওপর গবেষণার কাজ করেছিলেন।

কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে অবসরের পর তাঁকে প্রফেসর ইমেরিটাস মর্যাদা দিয়েছে। ব্রিটিশ সরকার ১৯০৩ সালে তাঁকে কমান্ডার অব ইন্ডিয়রন এমপায়ার উপাধি দেয়। ১৯২৮ সালে তিনি রাজকীয় বিজ্ঞান সমিতির ফেলো নির্বাচিত হন।

১৯২৭ সালে তিনি কলকাতায় একটি বিজ্ঞান গবেষণাকেন্দ্র স্থাপন করেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এটিকে তিনি একটি মন্দির হিসেবে উল্লেখ করেন। বর্তমানে এটি বসু বিজ্ঞান মন্দির নামেই বেশি পরিচিত।

জগদীশ চন্দ্র বসু মারা যান কলকাতায় ১৯৩৭ সালের ২৩শে নভেম্বর ।

 

Facebook Comments Box

Posted ৫:৪৪ এএম | বৃহস্পতিবার, ০৬ এপ্রিল ২০২৩

|

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

ইউএসএ থেকে প্রকাশিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল সংবাদ এবং তথ্যে আপনার প্রয়োজন মেটাতে

NSM Moyeenul Hasan Sajal

Editor & Publisher
Phone: +1(347)6598410
Email: protidinkar@gmail.com, editor@protidinkar.com

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।